সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ফটোগ্রাফী:



সৃষ্টিশীলতা ও ফটোগ্রাফী:

_____________________________________________
“দোস্ত, হলে দেখি গিটারবাদকের অভাব নাই। দুইমাস গিটার শিখে, তারপর ঘ্যাচিং ঘ্যাচিং কি জানি বাজায়, আর বেসুরা গলায় গান গায়।”
“দোস্ত, সবার হাতে হাতে দেখি ক্যামেরা। তোরা ক্যামেরা দিয়া হুদাই ভাব নিস। আমি একটা কিনি, আমিও ছবি তুলুম।”
“মনির, ক্যামেরার ক্রেজ গেছে গা। এখন সবাই বাইসাইকেল কিনতে চায়। এইটাই নতুন ফ্যাশন।”
জ্বি হ্যা। এই কথাগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে শোনা। আমার ধারনা আপনারাও শুনেছেন একই ধরনের মন্তব্য। কিন্তু দেখুন, এত গিটারবাদক আশে পাশে, তারপরও আইয়ুব বাচ্চুর মত গিটারকে কয়জন কাঁদাতে পারে? একবার এক কনসার্টে ওনার গিটারের কাজ হা করে দেখছিলাম, কেমনে করে আন্দাজ করারও চেষ্টা করিনি। স্টিভ ম্যককারির আফগান গার্ল তো শুধুই একটা ছবি, তারপরও সেই ছবি কি করে সারা দুনিয়ায় আলোড়ন তোলে? অথবা ধরুন নিক আট এর তোলা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সেই ছবি, যেখানে একটা বাচ্চা মেয়ে প্রাণের ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিল নাপাম বোমার ভয়ে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে এই ছবি অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিল।

আমার মতে সৃষ্টিশীলতা হচ্ছে সেই বস্তু যা আমাদেরকে অন্য সকল প্রাণী থেকে বিশেষ ভাবে আলাদা করেছে। আর শিল্প বা আর্ট হল একটা বৈশ্বিক ভাষা যা সমস্ত প্রচলিত ভাষার বাঁধা পেরিয়ে (যেটাকে আমরা বলি Language barrier) দেশ জাতি নির্বিষেশে সকল মানুষের কাছে একটা সত্যকে, অথবা একটা মেসেজকে পৌছেঁ দেয়। সব মানুষের মধ্যেই কম বেশি সৃষ্টিশীলতার চর্চা থাকে; সবাই চায় তার কাজে নিজস্বতার একটা ছোঁয়া রাখতে। একটা পর্যায়ে মানুষ উপলব্ধি করে যে ঠিক মুখের ভাষা দিয়ে ভূগলের বাঁধা পেরুনো যায় না।
ফটোগ্রাফীর পুরো প্রসেস এর একটা ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে ক্যামেরার শাটার এ চাপ দেয়া। এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ফটোগ্রাফার এর ভিশন…ব্যপারটা অনেকটা আপনার কল্পনাশক্তি, বিষয়বস্তু খুঁজে বের করার প্রখর দৃষ্টি এবং সঠিক মুহুর্তে ক্লিক করতে পারা- এই গুণগুলোর সংমিশ্রণ বলে মনে করতে পারেন। এবং এই বিষয়গুলো চাইলেই সহজে, বা খুব দ্রুত আয়ত্ত্ব করে ফেলা যায় না। হেনরি কার্টিয়ের ব্রেসন বলেছেন “আপনার প্রথম ১০,০০০ ছবি হলো আপনার তোলা সবচেয়ে খারাপ ছবি।”
তো মোদ্দা কথা হলো, অন্য সব আর্ট ফর্মের মতই, ফটোগ্রাফীও একটা সাধনার বিষয়। সময় লাগে, শ্রম লাগে এবং ভালবাসা তো অবশ্যই লাগে। একটা সাধারণ বিষয থেকে অসাধারন ফ্রেম বের করে আনার দক্ষতা অর্জনের জন্যে গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে চোখ দিয়ে একটা ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট খুজেঁ বের করার চর্চাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যপারটি আয়ত্ত্ব হয়ে গেলে ক্যামেরার টেকন্যিকাল বিষয় গুলো আপনিই হাতে চলে আসবে। যদি ক্যামেরার সব কন্ট্রোল বোঝার পরও ছবি তোলার উপযোগী বিষয় চোখের নাগালে আনতে না পারেন, তাহলে যেই ছবি হবে সেগুলো স্ন্যাপশট, আপনার মননশীলতার ছোঁয়া থাকবে না তাতে।
এই সেকশানের কথাগুলো কেমন জানি অসংলগ্ন হয়ে গেল। তারপরও যদি এই আলোচনা আপনাদের চিন্তার খোরাক যোগায়, সেটাই যথেষ্ট।





THE GIVEN PHOTOGRAPH TAKEN FROM THE WELL KNOWN PHOTOGRAPHER Steve McCurry 
ফটোগ্রাফার স্টিভ ম্যাককারির পেইজ এ যান, অনেকগুলো গ্যালারি আছে। ছবি দেখলে অনেক কিছু শেখা যায়।

লিংক: www.stevemccurry.com/galleries
আমার কিছু ছবির লিংকঃ www.mdrifatbinemdad.blogspot.com